আফলাতুন নাহার শিলু || শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আমার কিছু অব্যক্ত অনুভূতি

আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস!
অন্যদিনগুলো কী তবে বুদ্ধিহীন দিবস!
হাসি পায়, কষ্ট পায়, যখন দিবস উল্লেখ করা হয়।
প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে বুদ্ধিজীবীদের নির্মম হত্যার পরিণামে কী কী হারিয়েছি-জানি কী আমরা?
সহস্র বুদ্ধিমান, প্রজ্ঞাবান মানুষগুলোর জ্ঞান, প্রজ্ঞার অবদান কীভাবে পরিশোধ করবো আমরা?
একবার চোখ বন্ধ করে ভাবি?
একদিন একমিনিটের জন্যও ভাবি?
তাঁদের জ্ঞান, বুদ্ধি, সততা, অধ্যবসায়, পরিশ্রমে
আমার সোনার বাংলা আজ জ্বলন্ত জ্ঞানের ঝাড়বাতি হয়ে উঠতো, যে বাতির আলোতে প্রতিটি মানুষ আলোকিত হয়ে
একেকটি জ্বলন্ত মোমবাতি হতো।
সেই মোমের প্রদীপে অন্ধকার নিষ্পেষিত হতো,
অজাচার, দূরাচার, ধর্ষণ, চুরি, মিথ্যাচার বন্ধ হতো।
শিক্ষার আলোয় আলোকিত মানুষ কী কখনো প্রতারক হতে পারে? অস্তিত্বহীন হতে পারে?
হে কুলাঙ্গার, রাজাকার, পাকিস্তানী হায়েনার দল
তোরা কী একবারও ভেবেছিলি, জ্ঞান কখনো মরে না,
জ্ঞানীর মৃত্যু নেই, সে অমর। সে মরণশীল অমর ফুল।
তোরা কী জানিস, যাঁদের হত্যা করে উল্লাসের হাসি হেসেছিস, সোনার বাংলার মাটিকে রক্তাক্ত করেছিস তাঁদেরই পবিত্র রক্তে, সেই অমর ফুলগুলো আজ বাংলাদেশের প্রতিটি রঙের, প্রতিটি নামের, প্রতিটি বর্ণের ফুল হয়ে হেসে তোদের প্রতি বিদ্রুপ করছে।
হে রাজাকার, তোরা জীবনে কী পেয়েছিস,,, অর্থ! বিত্ত! লালসা! দস্যুর দল, তোদেরও কী শাস্তি হয়নি? তোরা নিজের দেশে ঠাঁই না পেয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছিস, অসম্মানের বোঝা নিয়ে অন্যের দেশের কুকুর হয়ে। এই ত তোদের জীবন!
আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শুধু ১৪ ডিসেম্বর স্মরণ করিনা। প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ স্মরণ করি। সালাম জানাই, স্যালুট জানাই, প্রার্থনায় স্মরণ করি। ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যত দিবস আমরা বিশেষভাবে স্মরণ করি, প্রতিটি দিবসে আমরা সকলে একটা গান মনে করি-‘ওরা আসবে চুপি চুপি, যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ।’ আজ আমি অন্যভাবে বলতে চাই, ওঁরা আসে প্রতিদিন চুপি চুপি নয়, সচকিতে আসে, দেখতে আসে ষোল কোটি মানুষের মনের আলো জ্বলছে কিনা, শিক্ষা ও শিষ্টাচার দিয়ে এ দেশের মানুষ রাজাকার ও তাদের বংশধরদের নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর কিনা। বেহেশত-লোভী ধনীর পূণ্য-পূঁজি বাড়ছে কিনা, সকলের মাঝে আনন্দ-বেদনাকে ভাগ করে দিতে ওঁরা প্রাণ দিয়েছিল, শুধু দেশকে ভালবেসে নয়। দেশের প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি ধূলিকণাকে রঞ্জিত করার জন্য নিজেদের বিসর্জন করে গেছে।
আর তোদের মত পরাজয়ের গ্লানিতে ন্যুজ্বমুখ বর্বরদের একদিন ঘৃণাভরে মনে করে ছুঁড়ে ফেলি আস্তাকুঁড়ে।